শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৪

অষ্টদশ নোট : ইসলাম ধ্বংসের এক নতুন চক্রান্ত

আমার অষ্টদশ নোট : ইসলাম ধ্বংসের এক নতুন চক্রান্ত 'ইন্টারফেইথ ডায়লগ'


'ইন্টারফেইথ ডায়গল'  ‌বাংলা করলে অর্থ দাড়ায় 'আন্তধর্মীয় সংলাপ'। যার ভাবানুবাদ -সকল ধর্মের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য সমঝোতা করা। বিষয়টা শুনতে ভালো শোনা গেলেও  এর পেছনের রয়ে গেছে ইসলাম ধ্বংসের এক গভীর ষড়যন্ত্র। আমার এবারের নোট সেই ইন্টারফেইথ ডায়লোগের মুখোশ উন্মোচন করেই তৈরী করা।

কিভাবে শুরু হলো এ ইন্টারফেইথ ডায়গল ???

ইন্টারফেইথ ডায়লগের উদ্ভাবক হচ্ছে সউদী ওহাবী বাদশাহ আব্দুল্লাহ। বাদশাহ আকবর যেমন দ্বীন-ই-ইলাহি নামক সর্বধর্ম চালু করেছিলো, সউদী বাদশাহও তেমনি মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য এ নতুন সিস্টেম আবিষ্কার করে। এ সম্পর্কে আব্দু্ল্লাহ নিজেই বলে :


‍২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে আব্দুল্লাহ ভ্যাটিকান সিটিতে খ্রিস্টানদের পোপের সাথে দেখা করে এবং বলে, 'আমি পোপের কাছে বিষয়টা উত্থাপন করলাম এবং বললাম : আমাদের সবাইকে গড এর ইচ্ছায় প্রেরণ করা হয়েছে এবং নিদের্শনা রয়েছে বাইবেল, তাওরাত ও কুরআনে। আমরা সবাই গডের কাছে প্রার্থনা করবো এটা নিশ্চিত করতে যে-আমরা একটি মাত্র বিষয়ে একত্র হবো, যেটা আমাদের সবার মধ্যেই আছে এবং আমরা সবাই মানবতা রক্ষার জন্য প্রার্থনা করবো'
এ প্ল্যান বাস্তবায়নে, ২০০৮ সালে ৪ঠা জুন মক্কা নগরীতে ডাকা হয় প্রথম সম্মেলন। যার নাম রাখা হয় 'মক্কা কনফারেন্স। সেখানে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৫০০ ইসলামী ব্যক্তিত্বকে দাওয়াত দেয়া হয়, উদ্দেশ্য, ইন্টারফেইথ এর বিষয়টা ছড়িয়ে দেয়ার প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য।

এরদিছুদিন পর জুলাই মাসের ১৬ তারিখ, স্পেনের মাদ্রিদে তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব সম্মেলনের ডাক দেয় বাদশাহ আব্দুল্লাহ। ঐ সময় বাদশাহ আব্দুল্লাহ'র সঙ্গে ছিলো স্পেনের রাজা প্রথম জুয়ান কার্লোস। এ অনুষ্ঠনটির পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলো সউদী ওহাবীদের একটি সংগঠন 'মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ'। এ অনুষ্ঠানে সারা বিশ্ব থেকে সকল ধর্মের ৩০০ জন ব্যক্তিত্বকে দাওয়াত দেয়া হয়। তারা এ আলোচনায় নিজের মৌলিক উদ্দেশ্য, যেমন: এক গডে বিশ্বাস, মানবতা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি  নিয়ে আলোচনা করে। এ্ই বিষয়টি যেন জাতিসংঘের উদ্যেগে সারা বিশ্বব্যাপী করা হয় সে জন্যও উক্ত অনুষ্ঠানে আহ্বান জানানো হয়।



























পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একত্র হয় নিউইয়র্কে। ২০০৮ সালের ১২-১৩ নভেম্বর বিশেষ ঐ সম্মেলনে বাদশাহ আব্দুল্লাহ ছাড়াও ঐ দলে ছিলো: জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, পাকিস্তানের আসিফ আলী জারদারি, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট গ্লোরিয়া এরোয়ো, ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ এবং জর্ডানের বাদশাদ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ।





ছবি: ইন্টারফেথ ডায়লগের আহবান জানাচ্ছে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ।
 
পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাদশাহ আব্দুল্লাহ'র নিদের্শনায় দুইদিন ব্যাপী সম্লেলন হয়।  বিষয়টিকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে, জেনেভায়তে ২০১১ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠা করা হয়, কিং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টাররিলিজিয়াস এবং ইন্টারকালচারাল ডায়গল (KAICIID)। মূলত এ ডায়গল সারা বিশ্বব্যাপী সউদী উদ্যোগে ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং এর পেছনে ইনভেস্ট করা হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারল। আর সেই অর্থের যোগান দেয় সৌদী ওহাবী সরকার।



ছবি: জেনেভায় অবস্থিত কিং আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টাররিলিজিয়াস এবং ইন্টারকালচারাল ডায়গল (KAICIID) কেন্দ্র

এরপর থেকে সউদী অর্থে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হতে থাকে ইন্টারফেইথ ডায়লগ কার্যক্রম। 


















এখন আপনারা বলতে পারেন, এতে সমস্যা কোথায় ?? যদি সব ধর্মের মানুষ এক সাথে শান্তিপূর্ণভাবে থাকা যায় তবে তো ভালই হয়। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, ইসলাম অনুসারে সব ধর্ম এক হয়ে থাকা কখন সম্ভব নয়।
১) মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন এবং সমস্ত ধর্মকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন।  এবং একই সাথে কাফিরদের শত্রু হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাহলে শত্রুর সাথে কিভাবে সমঝোতা করা যায় ???
২) এখানে এক গডে বিশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের মূল ভিত্তি অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলা্ইহি ওয়া সাল্লামের জন্য আমারা মুসলমান। এখানে নবীজিকে ত্যাগ করে শুধু গডে বিশ্বাস করা মুসলমানদের জন্য সম্ভব নয়।
৩) সারা বিশ্বের মুসলমানদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে, কিন্তু মুসলমানরা তো কাফিরদের নির্যাতন করছে না। তাহলে কেন বুশ কিংবা ইসরাইলের শিমন পেরেজ মুসলমানদের শান্ত হতে বলছে। বিষয় হচ্ছে, তারা মুসলমানও মারবে আবার এর মাধ্যমে শান্তির কথা বলে মুসলমানদেরও শান্ত করবে।
৪) প্রকৃতপক্ষে এ অনুষ্ঠানটির অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, জিহাদ সম্পর্কে নিরুৎসাহিত করা, যেন কাফিররা মুসলমানদের মার দিলেও মুসলমানরা তার প্রতিবাদে একতবদ্ধ না হতে পারে।


সর্বশেষ যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবতারণা করছি, এ ডায়লগ চলাকালে অন্যধর্মের সকলেই বলেছে, মুসলমানদের পবিত্র কুরআন পাকে ৭০০ আয়াত শরীফ আছে, যেগুলো কাফিরদের বিরুদ্ধচারণ করা হয়েছে, তাদের শত্রু বলা হয়েছে, তাদের সাথে জিহাদের কথা বলা হয়েছে। যদি মুসলমানদের সাথে সন্ধি করতেই হয় তবে সে সকল আয়াত শরীফ বাদ দিতে হবে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের কিং কাউন্টি হাসপাতলের একজন মুসলিম ডাক্তার অামাকে জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এক ধরনের কুরআন শরীফ পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে জিহাদের আয়াত শরীফগুলো নেই। রিপ্রিন্ট করা ঐ কুরআন শরীফ নাকি পাবলিশ করা হয়েছে কুয়েত থেকে,, যা এখনও মিডিয়াত আসেনি।
 

সূত্র:
১) এখানে সউদী সরকার কর্তৃক প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন পিডিএফ পাবেন, যেখানে পুরো বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে: http://saudiembassy.net/files/PDF/Reports/Interfaith_Magazine_Jan_2011.pdf
২) KAICIID কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে পারবেন : http://en.wikipedia.org/wiki/KAICIID_Dialogue_Centre
৩) বাংলাদেশওকওে এ গ্রুপে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে : http://www.bssnews.net/bangla/newsDetails.php?cat=6&id=37090&date=2010-03-21
৪) http://www.worldfolio.co.uk/region/middle-east/saudi-arabia/king-abdullah-bin-abdulaziz-saudi-arabia-makkah-n1297




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন