আমার ৬ষ্ঠ নোট: অখণ্ড ভারত নীতি ভুল প্রমাণিত, ইতিহাসের কাঠগড়ায় দেওবন্দী মওলানারা
29 October 2013 at 21:58
(সোনিয়া গান্ধীকে ভৃত্যের ন্যায় অনুসরণ করছে তামাম বিশ্বের দেওবন্দীদের
প্রধান আরশাদ মদনী) আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ইতিহাস সৃষ্টি করা নয়, ইতিহাস
পুনঃসত্যায়িত করা। যারা বাপ দাদারের ভুলগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়,
তাদেরকে বাস্তবতায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা, বোধ উদয় করা “হ্যাঁ আমার বাপ-দাদারাও
ভুল করতে পারে।”মুসলমানদের ঐতিহাসিক ভুলগুলো চিহ্নিত করাও এই লেখার উদ্দেশ্য, যেন মুসলমান পুনরায় সে ভুল না করে। কারণ ন্যাড়া একবার বেল তলায় গেলেও, মুসলমান ঠিকই বার বার বেল তলায় যায়।
১) নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হেজাজ থেকে সমস্ত কাফেরদের বের করে দিতে বলেছিলেন। এটার মূল কারণ ছিল কাফেরদের বদ-তাছির বা খারাপ প্রভাব। অর্থাৎ একজন কাফেরের সাথে থাকলে তার বদ প্রভাব পড়তে পারে। হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পুরো আরব থেকে সমস্ত কাফেরদের বের করে দিয়েছিলেন। শুধু আবু লুলু নামক এক কাফের ছিল, যে ভালো তরবারি বানাতে পারত। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো সেই আবু লুলুই উনাকে শহীদ করলো। অর্থ্যাৎ কাফের মাত্রই মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিলে দেখা যায়, কোন মুসলমান কখনই কাফেরের সাথে থাকার মনোবাসনা পোষণ করতে পারে না, কিন্তু সেই কাজটাই ১৯৪৭ সালে করেছিল দেওবন্দীরা, তারা চেয়েছিল মুসলমানদের সাথে নয়, হিন্দুদের সাথে থাকতে।
২) দেওবন্দীগোষ্ঠীকে প্রায়ই ফখর করতে দেখা যায়, হুসাইন মদনী অখণ্ড ভারতের পক্ষে ছিল বলে। তাদের দাবি, হুসাইন মদনীর সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এবং অখণ্ড ভারত থাকলেই নাকি ভালো হতো।
আজকেও যারা দাড়ি-টুপি পড়ে মূর্খের মত অখণ্ঢ ভারতের পক্ষে কথা বলে তাদের মুখে চপেটাঘাত করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। কারণ এই নীতি ভুল প্রমাণিত হতে বেশি দিন লাগেনি। ১৯৪৭ এ গণহারে মুসলমানদের গলাকাটা আর নারী ধর্ষণ দ্বারা এটাই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল, ‘দেওবন্দী হুসাইন মদনী’র হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই তত্ত্ব’ সত্য নয় বরং পবিত্র কুরআনের সূরা মায়িদার ৮২ নং আয়াত সত্য ‘নিশ্চয় মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী, অত:পর মুশরিক (হিন্দু)’। আর তাই শত্রুর সাথে একঘরে থাকা কখনই সম্ভব হতে পারে না।
(ছবি: ২০১১ সালে হিন্দু কূটনীতিক ও ইউনিভার্সাল সোসাইটি অব হিন্দুইজম-এর সভাপতি শ্রী রাজন জেড দেওবন্দ মাদ্রাসায় আসলে তাকে সাদরে গ্রহণ করেছে মাদ্রাসার ভাইস চ্যান্সেলর আবুল কাসেম নোমানি)
৩) সাধারণ মানুষের কাছে এই ‘অখণ্ড ভারত’ টার্মটা একটু কঠিন হওয়ায় আমি তা সহজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি।
‘অখণ্ড ভারত’ ‘অখণ্ড পাকিস্তান’র সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যারা পাকিস্তান ভাগ বা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি তারা ‘অখণ্ড পাকিস্তান’ নীতিতে বিশ্বাসী। তবে সমস্যা একটাই, ‘অখন্ড পাকিস্তান’ এ বিশ্বাসীরা চেয়েছিল পাকিস্তান ভাগ না হোক মুসলমান এক থাকুক, আর ‘অখণ্ড ভারত’ গোষ্ঠীরা চেয়েছে ভারত ভাগ না হোক আমরা হিন্দুদের সাথে মিলে মিশে থাকি।
ভারতের মুসলমানরা কেন সেই সময় পৃথক রাষ্ট্রের দাবী করে বসেছিল তা এই সময়কার দেওবন্দীদের অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তখন এমন অবস্থা বিরাজমান ছিল যে, সেই অবস্থায় তাদের কোন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সত্ত্বা বজায় থাকা সম্ভব ছিলনা। তাদের ধর্মীয় অনুশাসন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য চিরতরে বিলুপ্ত হবে, স্বাধীন ভারতে মুসলিমদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বসবাস করতে হবে। ভারতের মুসলিমরা তখন বিরাজমান বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অসহায় হয়েই মুসলিম লীগের পতাকা তলে একত্রিত হয়েছিলেন। নতুবা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জীবন মরণের সম্মুখীন হবার প্রয়োজন ছিলনা। তাই তো ১৯৪০ সালে এ,কে, ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম জনপদ নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র কায়েমের প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তীকালে ১৯৪৬ সালে পৃথক রাষ্ট্রের উপর যে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল তাঁর ফলাফলে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশে শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলিমগণ পৃথক রাষ্ট্রের পক্ষেই গণরায় দিয়েছিলেন।
(হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে হিন্দু ঠাকুর ও বিজেপি নেতাদের সাথে দেওবন্দী মওলানা মুফতী আব্দুর রাজ্জাক খান। সূত্র: http://www.thehindu.com/todays-paper/tp-national/sankaracharya-muslim-leaders-emphasise-communal-harmony/article476370.ece)
৪) দেওবন্দীদের এটা মানতেই হবে পাকিস্তান-বাংলাদেশ আছে বলে এই উপমহাদেশে মুসলমানদের আলাদা সত্ত্বা রয়েছে, না হলে ভারতে সেক্যুলারিটির নাম দিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা গরু কুরবানী আইনই শুধু বন্ধ হয়নি, উল্টো দেওবন্দী মওলানাদের দিয়ে গরু কুরবানীর বিরুদ্ধে ফতওয়া পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
৫) অনেক দেওবন্দীদের বলতে শোনা যায়, সে সময় হিন্দুদের আধিক্য ছিল। এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ সেই সময় হিন্দুদের আাধিক্য নয়, হিন্দু মুসলিম সমতা ছিল এবং পাওয়ার ছিল ইংরেজদের হাতে। সুতরাং মুসলমানরা যদি জোর খাটাতো তবে বিষয়টা সহজ হতো না।
অনেক দেওবন্দীরা আবার দাবি, সে সময় এত মুসলমানদের পক্ষে ভারত যাওয়া সম্ভব ছিল না। এটা সম্পূর্ণ ভুল তত্ত্ব। কারণ সেই সময় দেওবন্দীরা হিন্দুদের ‘অখণ্ড ভারত মাতা’ নীতি প্রচার না করে যদি স্বাধীনতার বিষয়টা প্রচার করত তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যেভাবে ৬টি মুসলমান দেশ হয়েছে তেমনি ভারতের ভেতর থেকেও বেশ কয়েকটি মুসলমান রাষ্ট্র বের হতো। যেমন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশে একচেটিয়া মুসলমানদের আধিক্য ছিল। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন মুসলমান স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারতো। যা সম্ভব হয়নি দেওবন্দীদের ইসলামের নাম দিয়ে বিরোধীতার কারণে।
(দেওবন্দ বার্ষিক অনুষ্ঠানের অবস্থা দেখুন)
৬) এখন অনেক দেওবন্দীকে ফখর করে বলতে শোনা যায়, ধর্মের ভিত্তিকে রাষ্ট্র হয়েছে পাকিস্তান আর ধর্মনিরপেক্ষ ভারত। এখনো দেওবন্দীরা সেই পুরোনো ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে যে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে বাস করছে এবং এখনও কথিত ধর্ম নিরপেক্ষ কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছে।
কিন্তু ভারত যে ধর্ম নিরপেক্ষ নয় বরং হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র তার জন্য আলাদা লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
আর কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষ নয় এটা বুঝতে কেন তাদের ৬৬ বছর সময় লাগলো। এতদিনে কেন হুসাইন মদনীর নাতি মেহমুদ মদনী বলছে কংগ্রেস গুজরাট দাঙ্গার সাথে জড়িত ছিল। যারা মুসলমানদের হর্তা-কর্তা দাবি করে তাদের সত্য বুঝার জন্য ৬৬ বছর প্রয়োজন হয়ে পারে না। (মেহমুদ মদনী এটা ফাঁস করেছে মুসলমানদের স্বার্থে নয়, মোদির জন্য মুসলমানদের ভোট সংগ্রহের স্বার্থে। সে যদি মুসলমানদের স্বার্থেই করত তবে ১১ বছর পর নয়, গুজরাট দাঙ্গার বিচারকার্য চলার সময় করত।)
(এরাই বাংলদেশের কওমীদের আদর্শ)
৭) অনেক দেওবন্দী বলেছে অখণ্ড ভারত থাকলে হিন্দুদের মুসলমান বানিয়ে ফেলা যেতো। কিন্তু তাদের এই তত্ত্বতে ভুল প্রমাণ করে উল্টো হিন্দুরা যে খোদ দেওবন্দীদের হিন্দু বানিয়ে ফেলেছে তার দলিল আমার আগের নোটগুলো থেকে পাবেন বলেই আশা করি।
৮) দেওবন্দীরা এখনো মূর্খের মত বলে থাকে ‘পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের মুসলমানরা ঈমানি দিক থেকে ভালো আছে”।
কিন্তু নিজেরাই এও বলে, হিন্দুত্ববাদীদের চাপের মুখে গরু কুরবানী বন্ধের ফতওয়া, কিংবা নরেন্দ্র মোদির পক্ষে সাফাই গেতে হয়েছে দেওবন্দী মওলানাদের। তাহলে তাদের বিচারেই দেখা যাচ্ছে, ভারতে হিন্দুদের কাছে মুসলমানদের ঈমানি অনুভূতির কোন দাম নেই। এমনকি দেওবন্দের মত এক শ্রেণীর মওলানারা পর্যন্ত জীবনের ভয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিতে শুরু করেছে।
দেওবন্দীগুরু আসাদ মদনীকে নির্দেশনা দিচ্ছে সোনিয়া গান্ধী
৯) সর্বশেষ পয়েন্টে বলব: দেওবন্দের অখণ্ড ভারত নীতির ভুল ফতওয়ার কারণে ভারতে যে কোটি কোটি মুসলমান শহীদ হলো, যে কোটি কোটি মুসলিম মা-বোন সম্ভ্রমহরণের শিকার হলো, যে কোটি কোটি মুসলমান ঘর-বাড়ি ছাড়া হলো, যে কোটি কোটি মুসলমান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকুরী থেকে বঞ্চিত হলো এর জন্য কে দায়ী হবে?? দেওবন্দীরা কি এই দায় এড়াতে পারবে? কখনই তারা তা পারবে না তারা। ইতিহাস তাদের কখনই ক্ষমা করবে না।
অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠায় একরোখা মনোভাবের জন্য দেওবন্দীদেরকে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে কাঠগড়ায়, হোক একালে অথবা পরকালে..................
মাজার শরীফগুলোতে যেসব বেশরা কর্মকাণ্ড হয় সেগুলোর দোহাই দিয়ে এরা ওলীআল্লাহগণ উনাদের মাযার শরীফসমূহই ভেঙে দিতে চায়। কিন্তু ভারতে দেওবন্দিদের মূল গুরুরা তাদের বার্ষিক সম্মেলনের অনুষ্ঠানে রামদেবকে ডেকে এনে মাদ্রাসাছাত্রদের সাথে নিয়ে গীতাপাঠ আর যোগসাধনার আসর বসালে তা নিয়ে তাদের শেরেক-বেদাতের উচ্চবাচ্য শোনা যায় না।
এখন যারা অন্ধবিশ্বাসী নয় তাদের জন্যই আমার ফেসবুকে লেখা। দেওবন্দি-জামাতিদের মন যুগিয়ে লিখলে আমিও একপাল নির্বোধবেষ্টিত সেলিব্রেটি হতে পারতাম, কিন্তু সেটা হওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য মুসলমানদের সত্যটা জানানো, যেন তারা মুনাফিকদের ধোঁকা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে চলতে পারে।
লেখা রয়েছে, “দেওবন্দো কি তাবলিগি সরগরমিয়াঁ আপনে উরুজ পার”। অর্থাৎ ”দেওবন্দিদের তাবলিগী আস্ফালন তার আপন উচ্চতায়।“
তারা বেগানা মেয়েলোকের সাথে গণতন্ত্র করে কিংবা ক্রিকেট খেলে সময় নষ্ট করে।